প্রশান্ত কিশোররাই কি ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ?

ডঃ কৌশিক ঘোষ

এই মুহূর্তে যে কয়েকজন ব্যক্তির নাম নিয়ে বাঙালি ‘গুডমর্নিং’ বলা থেকে ‘গুডনাইট’ বলা পর্যন্ত অবিরাম চর্চা করে চলেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রশান্ত কিশোর। ১৯৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করা প্রশান্ত কিশোর নিজেকে ‘রাজনৈতিক কুশলী’ বা ‘ভোট কুশলী’ (‘Political Strategist’) বলতে ভালবাসেন। ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি যে ধারার প্রবর্তন করেছেন এবং যে হারে সাফল্য পেয়েছেন, আস্তে আস্তে হয়ত সেটাই হয়ে উঠতে চলেছে ভারতীয় রাজনীতির মূল ধারা। ভারতীয় রাজনীতি হয়ত তাঁর হাত ধরে উত্তীর্ণ হবে এমন এক সংস্কৃতিতে যেখানে সদ্য রাজনীতিতে যোগ দেওয়া কোন যুবক – যুবতী শুধুমাত্র নেহেরু – জয় প্রকাশ নারায়ন – প্রমোদ দাশগুপ্তদের আর অনুসরণ করবে না। তাঁরা ভোটে জেতার জন্যে ভাষণ তৈরি করা থেকে নির্বাচনী প্রচারের সময় কি ধরণের পোশাক পরিধান করবেন, দলের শ্লোগান কি ধরণের হবে, রোড শো গুলো কি ভাবে আরো আরো বেশী আকর্ষণীয় করে তুলবেন— সব কিছুই ঠিক করে নেবেন ‘Indian Political Action Committee (I – PAC)’- এর মত কর্পোরেট সংস্থার থেকে। এবং রাজনীতির এই ‘Corporatization’ করার পেছনে যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তিনি হলেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর সংগঠন ‘Citizens for Accountable Governance (CAG)’, যা কিনা ২০১৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে যার নাম পরিবর্তন করে রাখেন Indian Political Action Committee (I- PAC), ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে কাজ করে চলেছে। এর সাফল্যের হার সত্যিই চমকে দেবার মত। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে তিনি যে দলের হয়েই রাজনৈতিক কুশলী বা ভোটকুশলীর কাজ করেছেন, শুধুমাত্র ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের পরাজয় ছাড়া আর কোথাও ব্যর্থতার মুখ দেখেননি তিনি। ভোট কুশলী হিসেবে ঠিক কি কাজ করেন প্রশান্ত কিশোর? এক কথায়, একটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে জেতানোর জন্যে যা যা করনীয়, তার সবই তিনি করে থাকেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার কি রকম হবে, নেতা নেত্রীরা কিভাবে র‍্যালি করবেন, কি ধরণের শ্লোগান দেওয়া হবে— সব কিছুই ঠিক করে দেন প্রশান্ত কিশোর।

আম বাঙালীর মনে এই ধারণা জন্ম নিতেই পারে যে, প্রশান্ত কিশোর যেহেতু এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে লড়াই করছেন, তাই নরেন্দ্র মোদী বা রাহুল গান্ধীর সাথে বোধহয় তাঁর বৈরীতার সম্পর্ক। যদি আম বাঙালি হিসেবে সত্যিই আপনি তাই ভেবে থাকেন, তাহলে আপনি জেনে রাখুন এই মুহূর্তে ভারতে যে কয়েক জন ব্যক্তি একই সাথে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর অন্দরমহলে প্রবেশ করার ক্ষমতা ও অধিকার রাখেন, প্রশান্ত কিশোর তাঁদের অন্যতম। দুই নেতার সাথেই তাঁর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা দারুণ পর্যায়ের। বস্তুতঃ প্রশান্ত কিশোরের ভারতীয় রাজনীতিতে পরামর্শদাতা হিসেবে পদার্পণ ঘটে নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই। রাষ্ট্রসংঘে দীর্ঘ দিন উচ্চ পদে চাকরী করা প্রশান্ত কিশোর ২০১১ সালে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন যার বিষয়বস্তু ছিল — ভারতের চারটি রাজ্য, যাদের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল কিন্তু অপুষ্টি সমস্যা বড্ড বেশী। এই চারটি রাজ্যের একটি ছিল গুজরাট। গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঙ্গে সঙ্গেই প্রশান্ত কিশোরকে ডেকে পাঠান এবং অল্প আলোচনাতেই প্রশান্ত কিশোর মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন জয় করে নেন। সেই শুরু। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে প্রবেশ করেন তিনি।

এরপর প্রশান্ত কিশোরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ আসে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রচারের দায়িত্বভার তুলে নেওয়া। শুধু প্রচারই নয়, নির্বাচনী বৈতরণী পেরনোর জন্যে যা যা করণীয়, সব কিছুই করে দেন প্রশান্ত কিশোর। আজকে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘চায়ে পে চর্চা’ – ও তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত। তাই আজকে যখন ‘চায়ে পে চর্চা’– র অনুষ্ঠান থেকে নরেন্দ্র মোদী বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন এবং মমতা বন্দ্যপাধ্যায় তার উত্তর দেন, তখন সেটা যেন হয়ে ওঠে প্রশান্ত কিশোর বনাম প্রশান্ত কিশোরের লড়াই। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে ভারতে নরেন্দ্র মোদী কে যে ভাবে প্রজেক্ট করা হচ্ছিল তা যেন অনেকটা রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থার নির্বাচনের প্রচারের ধাঁচে করা হচ্ছিল। এটা ছিল প্রশান্ত কিশোরেরই স্ট্র্যাটেজি। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৪ সালের বিপুল জয়ের পর তিনি নাকি বিজেপি সরকারকে বলেছিলেন সংসদীয় কাঠামোর পরিবর্তে ভারতে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা চালু করতে। যদিও তিনি পরবর্তীতে সবসময়ই এই বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছেন।

২০১৪ সালের সাফল্যের পর তিনি চাইলে কিন্তু কেন্দ্র সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে একটি সুখী জীবন কাটাতেই পারতেন। কিন্তু তা না করে ২০১৫ সালে তিনি বিহারে চলে আসেন নীতিশ কুমারের Janata Dal (United)- এর হয়ে কাজ করতে। তাঁর পরামর্শে নীতিশ কুমারের মহাগঠবন্ধন (লালু প্রসাদ যাদবের সাথে নীতিশ কুমারের জোট) মোট ২৪৩টি আসনের মধ্যে ১৭৮টি আসন জেতে। ২০১৪ সালে বিজেপির যে লহর সাড়া দেশে চলেছিল, যার অন্যতম স্রষ্টা তিনি নিজেই, সেই লহর তিনিই আটকে দিলেন বিহারে।

এরপর প্রশান্ত কিশোর ২০১৭ সালে দুটি আলাদা রাজ্যে একই দলের হয়ে রাজনৈতিক কুশলীর ভূমিকা পালন করেন। ফেব্রুয়ারী মাসে পাঞ্জাব বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেন এবং ফেব্রুয়ারী – মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত উত্তর প্রদেশে বিধানসভার নির্বাচনেও কংগ্রেসের হয়েই কাজ করেন তিনি। এখানে একটি ঘটনার কথা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে, পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে তিনি নাকি ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং-কে পরামর্শ দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধীকে যথা সম্ভব কম প্রচারে নিয়ে আসতে। সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশান্ত কিশোরের নাকি মনে হয়েছিল, রাহুল গান্ধী বেশী বেশী করে প্রচার করলে কংগ্রেসের পক্ষে হিতে বিপরীত হতে পারে। ক্যাপ্টেন নাকি সে পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। কিন্তু, তিনি প্রশান্ত কিশোর নিজে, সত্যি সত্যি রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থার পক্ষপাতী কিনা, সেই বিষয়টির মত এই স্পর্শকাতর বিষয়টিও সব সময়ই অস্বীকার করে এসেছেন।

আজ পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ারে একবারই নির্বাচনে পরাজয়ের ছাপ পড়েছিল ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার সময়। কিন্তু ওই নির্বাচনে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন নি। কংগ্রেসকে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্যে যা যা করতে বলেছিলেন, কংগ্রেস তা করেনি। কংগ্রেস কে তিনি বলেছিলেন ১৪ দফা কর্মসূচী পালন করতে, কিন্তু কংগ্রেস তা থেকে মাত্র ২ টি কর্মসূচী গ্রহণ করে। কিছুটা কংগ্রেসের হাইকমান্ডের নিজস্ব সিদ্ধান্ত আর কিছুটা প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ, সব মিলিয়ে নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে। ১০৫টি আসনে কংগ্রেস লড়াই করে মাত্র ৭ টি আসনে জয় পায়। প্রশান্ত কিশোর ভগ্ন মনোরথে রাহুল গান্ধীকে বলেছিলেন, কংগ্রেস নিজের মত চললেও ৭ টির বেশী আসন পেত, পুরোপুরি আমার কথা শুনলেও ৭টির বেশী আসন পেত। কিন্তু দুই পক্ষের প্রস্তাব মিলেমিশে হচপচ হয়ে গিয়ে এই কেলেঙ্কারি হয়েছে। কিন্তু একজন পেশাদার হিসেবে এই পরাজয়ের দায়ভার অবশ্য কোনোদিনই অস্বীকার করেননি প্রশান্ত কিশোর।

২০১৯ সালের অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ওয়াই এস জগন মোহন রেড্ডি ২০১৭ সালের মে মাসে প্রশান্ত কিশোরকে বিশেষ পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল বের হলে দেখা যায় ১৭৫ টি আসনের মধ্যে জগন মোহন রেড্ডির YSR Congress Party ১৫১টি আসন লাভ করেছে। ফল ঘোষণার পর প্রকাশ্যে সংবাদ মাধ্যমের সামনে জগন মোহন রেড্ডি প্রশান্ত কিশোরের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

২০১৯ সালের মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করবার পর পরই জুন মাস নাগাদ তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে গাঁটছড়া বাধেন প্রশান্ত কিশোর। অনেকেই জানেন না, এর আগে ২০১৫ – ১৬ সাল নাগাদও একবার তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে তাঁর তৃণমূল কংগ্রেসকে পরামর্শদানের বিষয়ে কথা হয়েছিল। সে সময় কলকাতাতে এসেওছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু তখন তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থা এতটাই ভাল ছিল যে তিনি মনেই করেননি যে এখানে তাদের কোন পরামর্শদানের প্রয়োজন আছে। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপর্যয় সব হিসেব ওলট পালট করে দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস আর কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে প্রশান্ত কিশোরকে তাদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়ে আসে। তিনি তাঁর সাফল্য সম্পর্কে কতটা নিশ্চিত সেটা বোঝা যায় যখন তিনি এক নাগাড়ে বলে চলেছেন যে, বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গে ১০০ টি বা তার বেশী আসন পায় তাহলে তিনি রাজনৈতিক কুশলী হিসেবে আর কাজ করবেন না।তিনি বা তাঁর টিম কতটা ভাল কাজ করলেন বা না করলেন সেটা জানা যাবে ২ রা মে- র পর। কিন্তু এটাও সত্যি যে এখন তিনি এমন একটি শিখরে দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে এই ধরণের কোন একটি জায়গার সাফল্য বা অসাফল্য দিয়ে তাঁর কাজকে মাপা যাবে না। তাঁর প্রতি রাজনৈতিক দলগুলির চাহিদার লেভেল এখন অন্য পর্যায়ে। গত মার্চ মাসের ১ তারিখে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং প্রশান্ত কিশোরকে ১ টাকা বেতনের বিনিময়ে তাঁর মুখ্য পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। উদ্দেশ্য অবশ্যই ২০২২ সালে ২০১৭ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটানো। এবং ইতিমধ্যেই এই মুখ্য পরামর্শদাতা পদটিকে ক্যাবিনেটের সমতুল্য বলে সরকারী নির্দেশিকাও বের করে দিয়েছে পাঞ্জাব সরকার।

প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক কুশলী হিসেবে কর্মজীবনের সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এখনো পর্যন্ত প্রশান্ত কিশোর যে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করেছেন, সবাই সবার পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এরপর হয়ত দেখা যাবে কোন এক মরশুমে একটি রাজ্যে কংগ্রেসকে সহায়তা করে ঐ মরশুমেই আর একটি রাজ্যে বিজেপিকে সহায়তা করছেন প্রশান্ত কিশোর বা তাঁর মত সংস্থাগুলি, অথবা পরের মরশুমে। ইতিমধ্যেই আমরা এ ধরণের একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। ২০১৭ সালে পাঞ্জাবে কংগ্রেসের জয়ের পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রশান্ত কিশোর জোট বাঁধেন দিল্লীতে আম আদমি পার্টির সাথে। টুইটারে প্রশান্ত কিশোর স্বীকারও করে নেন যে, আজ পর্যন্ত যে রাজনৈতিক দল আমাদের সব চেয়ে বেশী বেগ দিয়েছে, তাদের সাথে আমরা গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছি (২০১৭ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি ২০ টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল এবং কংগ্রেসকে সবচেয়ে বেশী বেগ দিয়েছিল)। এই গাঁটছড়ার উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিতব্য দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে জয়লাভ করা। ওই নির্বাচনে আম আদমি পার্টি ৭০ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৬২ টি আসনে জয়লাভ করে।

তবে ভোট কুশলীদের নিয়ে কাজ করার কয়েকটি নেতিবাচক দিকও কিন্তু থাকতে পারে। যেহেতু প্রশান্ত কিশোর বা তাঁর মত সংস্থার লোকেরা সমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী লোকেদের সান্নিধ্যে সব সময় থাকেন, তাই আস্তে আস্তে এই ভোট কুশলীরা সংবিধান বহির্ভূত প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাবেন না তো? ভারতীয় রাজনীতিতে ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারি, চন্দ্রস্বামীর উদাহরণ কিন্তু বিদ্যমান। যদিও তারা ভোট কুশলী ছিলেন না, কিন্তু সংবিধান বহির্ভূত প্রভূত ক্ষমতা ভোগ করতেন। আর একটি বিষয় হল, ভারতে যেহেতু জোট রাজনীতির বহুল প্রচলন, তাই প্রশান্ত কিশোর বা তাদের মত সংস্থার লোকেরা ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে অনেক রাজনীতির পাশা এদিক ওদিক করে দিতে পারেন। সেটা কতটা ভাল আর কতটা খারাপ হবে, সেটা বলার মত পরিস্থিতি অবশ্য এখনো আসেনি।

রাষ্ট্রসংঘের ভাল চাকরি ছেড়ে ভারতে আসেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর নিজের ভাষায়— যখন আর্মানির মত দামি ব্র্যান্ড ব্যবহার করা শুরু করেছিলাম, তখনই সব ছেড়ে চলে আসি। এহেন প্রশান্ত কিশোরের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে কিন্তু প্রবল। ইতিমধ্যেই একবার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগও দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে নীতিশ কুমারের Janata Dal (United) দলে। কিন্তু সে অভিজ্ঞতা তাঁর সুখকর হয়নি। ২০২০ সালে দলের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটে তাঁর। যদিও ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁর মতে, তিনি যদি রাজনীতিতে এসে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত না করেন, তাহলে এখন যে সকল রাজনীতিবিদ তাঁর বন্ধু আছেন, তারা কেউই তাঁকে সমকক্ষ বলে মনে করবেন না। তিনি সারাজীবন রাজনৈতিক কুশলী হিসেবে কাটাতে চান না। কিন্তু নিজেই কোন দল তৈরি করবেন, না কি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন সে বিষয়ে সচেতনভাবে এখন চুপ করে থাকেন প্রশান্ত কিশোর। ও হ্যাঁ, আরো একটি কথা বলা হয় নি, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে মহারাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিধানসভার নির্বাচনে উদ্ধব ঠাকড়েকে নির্বাচনে জয়লাভের মোক্ষম পরামর্শটি দিয়েছিলেন এই প্রশান্ত কিশোরই। তিনি বলেছিলেন, হিন্দিভাষী লোকেদের প্রতি শিবসেনার আচরণে আরও পরিবর্তন আনতে হবে, আরও বেশী সহনশীল হতে হবে তাদের প্রতি। এই পরামর্শেই বাজিমাত করেন উদ্ধব ঠাকরে।

লেখক, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক

Facebook Comments
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!