নেই পরিষেবার মাঝে এই নির্বাচনে কেমন যেন নিরুত্তাপ শিলিগুড়ি

কে বসবে শিলিগুড়ির মসনদে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে কম বেশি করে প্রায় সকল শিলিগুড়িবাসী, এমনকি প্রবাসীরাও। অর্থাৎ সেই সব শিলিগুড়িইয়ান রা যারা শিলিগুড়ির বাইরে থাকেন, সে কর্ম সুত্রে হোক, পড়াশোনা হোক কিংবা স্থায়ীভাবে। হবে নাই বা কেন! এবার যে একেবারে গুরু শিশ্যের লড়াই। এযাবৎ কালে এমন যুযুধান দুই প্রার্থীর লড়াই অন্তত শিলিগুড়িতে দেখা যায়নি। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এটা একটা প্রজন্মের যুদ্ধ। এর কারণ হিসেবে তাদের মতে ডঃ শঙ্কর ঘোষ এই মুহূর্তে এই নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে ভাবা হচ্ছে এবং সংযুক্ত মোর্চা মনোনীত প্রার্থী বামফ্রন্টের বর্ষীয়ান নেতা অশোক ভট্টাচার্য্য কে ভাবা হচ্ছে আগের প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে। যদিও দুই শিবিরই এই ভাবনা কে নস্যাৎ করতে ভুলছে না তাদের প্রতিটি প্রেস কনফারেন্সে ও জনসংযোগ ভাষণে। তবুও এটাও ঠিক কেনই বা শঙ্কর ঘোষ শিবির এবং অশোক ভট্টাচার্য্য শিবির কে বারবার এই প্রসঙ্গ তুলে ভাষণ দিতে হচ্ছে? কেনই বা তাদের শরীরী ভাষায় মনের আশঙ্কাটা ধরা পরে যাচ্ছে? উত্তর পাওয়া যাবে ২রা মে। তবে এই দুই দলের লড়াই এর মধ্যে থেকে অনেকেই কিন্তু অবহেলা করা হচ্ছে তৃনমূল প্রার্থী ডঃ ওম প্রকাশ মিশ্র কে, তার লড়াই কে, তার নতুন আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা কে ইত্যাদি। আসলে অবহেলা নয়, এটা বলা যেতে পারে এক প্রকার জনতার মুড। সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ্যে না বললেও আন্দাজ করে নিচ্ছে যে হয়ত বা এই বার তিনি এই যুদ্ধে কিছুটা ব্যাকফুটে। কারণ একটাই ‘বাইরের প্রার্থী’। তবে সব কিছুই অনুমান মাত্র। এর একটা প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ভোট প্রচারের হোর্ডিং, দেওয়া লিখন, ব্যানার ইত্যাদি তে। সারা শহর জুড়ে তৃনমূল, এর পরেই সংযুক্ত মোর্চা এবং তৃতীয়তে বিজেপি। ডঃ শঙ্কর ঘোষ তবে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন “দেওয়ালে নয় নাম লেখাতে হবে হৃদয়ে – সেই প্রচেষ্টাই করছি”। ভোটের হওয়া কোন দিকে যাবে ঘুরে তা বলা খুব কঠিন। এখনো তেমন তারকা প্রচার ঠিক কোন দলের শুরু হয়নি। শেষ মুহূর্তের প্রচার অন্তত আভাষ দিতে পারবে কোন দিকে যাচ্ছে শিলিগুড়ির মুড। এটা ঠিক যে গত ১০ বছরে এই শহরের উন্নয়ন এবং পরিষেবা অনেকটাই ধীর গতিতে এগুচ্ছে। রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহৎতম এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবেই শিলিগুড়ি কে বলা হয়। অথচ নেই সেই অর্থে সঠিক পরিষেবা। শিলিগুড়ির জ্যাম এখন বিশ্ব বিখ্যাত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এক সময়ের টেবিস টেনিস খেলা এখন ইতিহাসের পাতায় যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিলিগুড়ির ছেলে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম উইকেটরক্ষক – ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা, অথচ তার শহরে নেই কোন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পানীয় জল পরিষেবা, জঞ্জাল সরানোর পরিষেবা, নিকাশী ব্যাবস্থা, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দূষণ আরও নানান সব কিছু নিয়ে শিলিগুড়ি শহর শিলিগুড়িবাসীর কাছে নিঃশ্বাস ফেলা দায় হয়ে ঠেকেছে। তার কারণ অবশই রাজনৈতিক। প্রথম ৫ বছর শিলিগুড়িতে তৃনমূলের বিধায়ক থাকলেও, শহরে পৌর নিগম দখলে ছিল কংগ্রেস এবং পরবর্তীতে ছিল বামফ্রন্ট। এবং তার সাথে ছিল রাজ্যে সরকার এবং স্থানীয় সরকারের মধ্যে তরজা যা বারংবার সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছিল এবং রাজনৈতিক ভাবেও তুলে ধরা হয়েছিল। আসল সত্যিটা সাধারন মানুষের জানার ক্ষমতা নেই বা দরকারও নেই। সাধারন মানুষের দরকার উন্নয়ন এব পরিষেবা যার অভাব বোধ করেছে শহরবাসী প্রতিনিয়ত। হয়ত এই কারনেই সাধারন শিলিগুড়িবাসী কে সোজাসাপটা ভাবে এই নির্বাচন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে বেসিরভাগ নাগরিক বলবে – “রাখুন তো মশাই অনেক হয়েছে”। এই নির্বাচন কি এনে দিতে পারবে সেই নাগরিক দের তাদের প্রত্যাশা মত উন্নয়ন এবং পরিষেবা কে? উত্তর সময় বলবে।

ছবি: সংবাদচিত্র

Facebook Comments
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!