‘উত্তরবঙ্গের জন্যে ভাল কিছু করতে চাই এবং সেই ক্ষমতা আমি রাখি’ – ডঃ শঙ্কর ঘোষ

দুই দিন কেটে গেছে শহরের আনাচে কানাচে এখনো অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না এই সংবাদ। দক্ষিণবঙ্গের যে সকল ঘটনা ঘটে চলেছে তবে শিলিগুড়ি শহরের রাজনৈতিক আলোচনা কিন্তু একজন দাপুটে রাজনৈতিক ব্যাক্তি কে ঘিরেই রয়েছে। তিনি হলেন সদ্য বাম শিবিরের থেকে বেড়িয়ে আসা এবং পদ্ম শিবিরে যোগদান করা ডঃ শঙ্কর ঘোষ। অনেক দুঁদে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকও এমনটা ধারনা করতে পারেনি। এই নিয়ে চলেছে গভীর অনুসন্ধান এবং আগামীর রাজনৈতিক পথ অন্বেষণ করা। এই সময়ে তাই টি.এন.আই ডঃ শঙ্কর ঘোষের সঙ্গে একান্তে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নিলেন তার থেকে।

টিএনআই: কিভাবে মানুষের সঙ্গে আবার নতুন করে নতুন ভাবধারায় যোগাযোগ স্থাপন করবেন?

ডঃ শঙ্কর: মানুষের সঙ্গে কাজ করাটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমি কাজকে একটা আদর্শ কে সামনে রেখে করতাম এখনো করব। এবার সেই আদর্শের জায়গায় একটা সংঘাত হয়েছে কিন্তু কাজের জায়গায় কোন সংঘাত নেই। শুন্য হাতে এসেছিলাম শুন্য হাতে বেড়িয়ে গেছি। কাজকে নিয়েই চলি তাই নিয়েই থাকবো।

টিএনআই: আপনার জন্য সম্বর্ধনা এবং তিরস্কার দুটোই চলছে শহর জুড়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনুভুতি কেমন লাগছে?

ডঃ শঙ্কর: খুব সহজ ভাবেই গ্রহণ করছি। এর মধ্যে যে যে উপাদান আমার পরবর্তী সময়ে কাজে লাগতে পারে শুধু সেই উপাদান গুলো নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছি। তবে এই মুহূর্তে আমি সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে খুব একটা কানেক্টেড নই কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক তৈরি করা সহজ, আসল কাজের জায়গায় নয়। এর কারণ আমি যে জায়গায় বিতর্ক সৃষ্টি করেছি সেটা হল সরাসরি মানে সেনাপতি, রাজা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। এই বিতর্কটা কঠিন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার বিতর্কও ভাল কারণ ওর মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু বোঝা যায় যার দ্বারা নিজেকে তৈরি করা যায়। ভালটা ভাল ভাবে নিচ্ছি। খারাপটা সতর্কভাবে নিচ্ছি।

টিএনআই: আপনি বলেছিলেন একটা বড় চিন্তাভাবনা রয়েছে শিলিগুড়ি শহরের উন্নয়নের ব্যাপারে। কিভাবে শুরু করতে চান সেই কাজ যখন বর্তমানে আপনি বর্তমানে এক ভিন্ন নৈতিক প্রেক্ষাপটে রয়েছেন?

ডঃ শঙ্কর: শুধু শিলিগুড়ি নয় সমগ্র উত্তরবঙ্গ নিয়েই ভাবনা আছে সেটা শিক্ষা থেকে শিল্প, পরিকাঠামো সবই। উত্তরবঙ্গের মানুষের কিন্তু এই নিয়ে একটা যন্ত্রণা আছে। উত্তরবঙ্গের মানুষেরা অতিথিদের বরণ করতে সব থেকে বেশি আগ্রহি। তবে উত্তরবঙ্গ তার প্রাপ্য জায়গাটা পায়নি দশকের পর দশক ধরে। সুযোগ যদি আসে তবে উত্তরবঙ্গের জন্যে ভাল কিছু করতে চাই এবং সেই ক্ষমতা আমি রাখি।

টিএনআই: উত্তরবঙ্গ নিয়ে কি রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি রয়েছে?

ডঃ শঙ্কর: আমার কোন স্ট্রেটেজি নেই। আমি সোজা ব্যাটে খেলি। আমি শুধু কাজটা করতে চাই পিছিয়ে পরা মানুষ, সেটা আর্থিক বা সামাজিক হোক না কেন।

টিএনআই: উত্তরবঙ্গ নিয়ে কি উন্নয়নমুখি কোন রকম স্ত্রাটেজির কথা ভেবেছেন মূলত শিল্পায়নের দিক থেকে?

ডঃ শঙ্কর: হ্যাঁ অবশ্যই কারণ এতদিনেও উত্তরবঙ্গে ভারী শিল্প নিয়ে কোন ভাবনা চিন্তাই হয়নি। মূলত শুধু চা শিল্পই উত্তরবঙ্গে চলছে। আরও একটা শিল্প নিয়ে আরও গভীরভাবে কাজ করা যেত সেটা হল পর্যটন যা এখনো অবধি কিছু সেই অর্থে করা হয়নি। আরও কিছু রাস্তা খোলা আছে যেটা নিয়ে আমার ভাবনা আছে সেই ক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকার এগিয়ে আসলে উত্তরবঙ্গ কে আমরা একটা শিল্প উন্নত জায়গায় উন্নীত করতে পারবো।

টিএনআই: উত্তরবঙ্গে পর্যটন বলতে এখনো পাহাড় আর ডুয়ার্স কে বোঝায় অথচ অনেক ঐতিহাসিক জায়গা রয়েছে যেমন কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মালদা, বালুরঘাট, যে জায়গাগুলি এখনো সেই ভাবে পর্যটন মানচিত্রে উঠে আসেনি। সেই ব্যাপারে কিছু বলুন।

ডঃ শঙ্কর: অবশ্যই উত্তরবঙ্গ কে সেই অর্থে এখনো উদ্ঘাটনই করা হয়নি এখনো। বাম সরকারের আমলে পর্যটন কোন ভাবেই চিন্তাধারাতেই ছিল না। তৃণমূলের আমলে বিভিন্ন ভাবে রাজনৈতিক ডামাডোলের জন্যে সেই অর্থে দানা বাঁধাতেই পারেনি। সুযোগ পেলে এই খামতি গুলো মিটিয়ে নতুন চিন্তায় পর্যটন কে সামনে নিয়ে আসার ভাবনা রয়েছে।

টিএনআই: ‘এই প্রজন্ম’ কে কি ভাবে চালনা করবেন এবার থেকে?

ডঃ শঙ্কর: আমি ‘এই প্রজন্ম’ এর সঙ্গে রাজনীতির কোন যোগ নেই। এই সংস্থার সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই অরাজনৈতিক ভাবেই রয়েছে।

টিএনআই: পাড়ায় কেমন ভাবে ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বা উন্নতি হয়েছে?

ডঃ শঙ্কর: আমি কোন ভাবমূর্তির জন্যে রাজনীতি করিনা রাজনীতি করি কাজের জন্যে। যে ভাবে কাজ করেছি ভালবাসা পেয়েছি। আমার একটা বড় মানসিক শক্তি আছে। আমি যদি সঠিক পথে থাকে আমার কাজ আমার কাছের মানুষের কোন দিন মাথা নত করবে না। আমার সিদ্ধান্ত একটা অবিশুদ্ধ এবং অনৈতিক জোটের বিরুদ্ধে নেমেছি। এটা অনেকে অনুভব করছে না যারা বর্তমানে আমার ওপর অভিমান করেছে। আমার মত অনেক লোক ভাবে যে পুরনো দলের এই সব অনৈতিক ব্যাপার নিয়ে কিন্তু কিছু বলে না। আমি একটি নীতি নিয়ে কাজ করি। আমার পকেটে যেদিন ছিল পদত্যাগ পত্র সেই দিনও আমি পুরনো পার্টির হয়ে দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে ঝান্ডা লাগিয়েছি।

টিএনআই: যারা আপনার অনুগামী তাদের কেমন লাগছে? কেমন ভাবে তাদের কি অনুভুতি রয়েছে?

ডঃ শঙ্কর: দুই ধরনের ব্যাপার দেখলাম। আমার ওপর অভিমান করে কান্নাকাটি করেছে এখনো করে যাচ্ছে। এর কারণ আমি তো তাদের পথভ্রষ্ট হতে বলিনি। আমি কোন দিন তাদের বলিনি যে যারা আমাকে অনুসরণ করছে তারা আমার শেখানো জিনিষ ভুলে যাক। আমার সিদ্ধান্তের পেছনে দুটো কারণ থাকবে সেটা হল উচ্চাকাঙ্খা অথবা যন্ত্রণা। উচ্চাকাঙ্খা আমার নেই কারণ দল ছাড়ার শেষ দিন অবধি আমি পুরনো পার্টির হয়ে কাজ করেছি। বাকি থাকলো যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণার শরিক আমি কাউকে করিনি। আমার প্রশ্ন হল নীতিভ্রষ্ট লোকেরা পুরনো দলে নীতি নিয়ে কথা বলে। আমার লড়াই তাদের বিরুদ্ধে।

টিএনআই: কাছের মানুষজনের রিয়েক্সন কেমন? যেমন বন্ধু বান্ধব, প্রতিবেশী ইত্যাদি।

ডঃ শঙ্কর: বেশিরভাগ মানুষের বক্তব্য যা করেছ ঠিক করেছ। এরকম পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল নাহলে এই জিনিষ বন্ধ হবে না।

টিএনআই: আপনার পারিবারিক লাইফ কি কোন ভাবে এফেক্ট করেছে?

ডঃ শঙ্কর: আমার স্ত্রী প্রথমে মানতে পারেনি। তবে পুরো ব্যাপারটা জেনে আমার সঙ্গেই আছে। এইবার সে হয়ত নতুন দলের হয়ে প্রচারে বের হবে। আগে সে সেটা কোনদিন করেনি।

টিএনআই: এই সিদ্ধান্তের পরে, বিবর্ত সময়ে এবার পয়লা বৈশাখ কেমন কাটতে পারে?

ডঃ শঙ্কর: আমি সবসময় একটা নতুন সৃষ্টির পক্ষে। যে কোন জিনিষ সৃষ্টির জন্যে একটা নির্দিষ্ট সময় লাগে। সব বীজেই একই দিনে গাছ বের হয়না। একটা সৃষ্টি করেছিলাম সেই বীজেই গাছ হয়েছিল। আরও একটা বীজ লাগাবো আরও একটা গাছ হবে এই ভাবেই চলবে জীবনের নিয়মে।

Facebook Comments
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!