রায়গঞ্জে চলে গেলেন প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়
পার্থ চ্যাটার্জি (টি.এন.আই রায়গঞ্জ) । টি.এন.আই সম্পাদনা শিলিগুড়ি
বাংলাডেস্ক, টি.এন.আই, রায়গঞ্জ, ২১শে নভেম্বর, ২০১৮: ৯৫ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন রায়গঞ্জের প্রবীন স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়। বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি রায়গঞ্জে শহরের মিলনপাড়ায়। বুধবার সকালে তিনি দেহত্যাগ করেন। তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তাকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মান জানানো হয়েছিল। তিনি বহুবার জেলও খেটেছেন। এবছরই স্বাধীনতা দিবসে আগে রায়গঞ্জের মিলন পাড়ার জরাজীর্ণ বাড়ির বারান্দায় বসে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পরেছিলেন ৯৫ বছর বয়সী স্বাধীনতা সংগ্রামী মনীন্দ্র নাথ রায়। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আমাদের প্রতিনিধির সাথে একান্ত সাক্ষ্যৎকারে শোনালেন সেদিনের রক্ত ঝড়া স্বদেশী আন্দোলনের কথা। ১৯২৩ সাল। স্বদেশী আন্দোলনে উত্তাল অবিভক্ত ভারতবর্ষ। সেই সময়েই বাংলাদেশের পাবনা জেলার হাটুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন মনীন্দ্র বাবু। জন্ম থেকেই পিতৃহারা মনীন্দ্র বাবুকে কাছে টেনে নেন জ্যাঠামশাইরা। লেখাপরার সাথে সাথে চারপাশের উত্তপ্ত পরিবেশ কেমন যেন অস্থির কোরে তুলছিল কিশোর মনটাকে। বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলনে উত্তাল আ- সমুদ্র হিমাচল প্রায় প্রতিটি মানুষের মুখে তখন একটা ই গান “ভেঙ্গে ফেল রেসমী চুড়ি ও বঙ্গ নারী…” রক্তে দোলা লেগেছিলো কিশোর মনীন্দ্রর। এর পর নানা আন্দোলনে সামিল হতে হতে অচিরেই স্বদেশী আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন ১৬ বছরের মনীন্দ্র চন্দ্র রায়। ষোল বছর বছর বয়সেই জেলা শাসক তার ওপর রেসট্রিকসন অফ মুভমেন্ট অর্ডার জারী করেন। ১৯৪২ সালে প্রথম ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়ান রুলে জেলে যেতে হয় মনীন্দ্র বাবুকে। জেলে বসেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন তিনি। জেল থেকে বেড়িয়ে শুরু হয় আরো বেশী করে অংশ নিতে থাকেন স্বদেশী আন্দোলনে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রানিত বেপরোয়া যৌবন মন তখন বেছে নেয় অহিংস আন্দোলনের কঠিন পথ কেই। দুচোখে স্বপ্ন তখন ইংরেজ শাসনের হাত থেকে মুক্ত ভারত আর হৃদয় জুড়ে নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফোউজের পদধ্বনি “কদম কদম বাড়ায়ে যা…..” অচিরেই বেপরোয়া মনটাকে বেসামাল করে দিয়েছিল। এর পর লাগাতার নানা আন্দোলনে অংশ গ্রহন, ক্রমান্বয়ে চিন্তার কারন হয়ে উঠে ছিল ইংরেজ শাসক গোষ্ঠীর। ১৯৪৬ সালে দমদম সেন্ট্রাল জেলে থাকা কালীন একবার গান্ধীজী স্বয়ং তাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তখন তার সাথে অন্যন্য বন্দীদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিন বিহারি গাঙ্গুলী, সোমেন ঠাকুর, কালিপদ মুখোপাধ্যায়, অশোক ঘোষ প্রমুখ ব্যাক্তিরা। বুধবার তার শেষ যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ পুরসভার পুরপতি সন্দীপ বিশ্বাস সহ অগন্তি সাধারণ মানুষ। সন্দীপবাবু বলেন, তিনিই ছিলেন শহরের সবচেয়ে প্রবীণ জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনিও আজ চলে গেলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী বলতে আর কেউ রইলো না। তার মৃতু্যতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
ছবি: পার্থ চ্যাটার্জি (টি.এন.আই)