“মা-মাটি-মানুষের সরকার মাটি দিয়ে ‘মা’ তৈরির মানুষদের কোন খোঁজ রাখে না”
অরুনাংশু মৈত্র (টি.এন.আই ফালাকাটা) । টি.এন.আই সম্পাদনা শিলিগুড়ি
বাংলাডেস্ক, টি.এন.আই, ফালাকাটা, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮: বাঙ্গালীর সেরা পুজো দুর্গা পুজো শুরু হতে বাকি মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দিন৷ দুর্গা প্রতিমা বানাতে এই মুহুর্তে মৃৎশিল্পীদের ব্যাস্ততা তুঙ্গে৷ অথচ, ফালাকাটা শহরের মৃত শিল্পীদের এবারের ব্যাস্ততা যেন অন্যবছরের চেয়ে একটু কম৷ কিন্তু কেন? ফালাকাটার প্রবীন মৃৎশিল্পী পরেশ পাল দুর্গা প্রতিমাতে মাটির প্রলেপ দিতে দিতে বলেন, তাদের কোন খোঁজই রাখেনা সরকার। প্রবীন এই শিল্পীর কথার মধ্যেই একটা চাপা অভিমান বেরিয়ে এলো৷ এ রাজ্যে যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, “তারা তো নিজেদেরকে মা-মাটি-মানুষের সরকার বলেন৷ অথচ, মাটি দিয়ে যে মানুষগুলি মায়ের মুর্তি বানান, তাদের কোন খোঁজই রাখেনা সরকার!” তবে শুধু এই মৃৎশিল্পীরই নয়, এই ক্ষোভটা এলাকার প্রায় সব মৃৎশিল্পীর মধ্যেই কম-বেশি রয়ে গিয়েছে৷ ফালাকাটা ব্লকে প্রায় ২৫-৩০ জন মৃৎশিল্পী প্রতিমা গড়ার সঙ্গে যুক্ত৷ কিন্তু ঠিক একবছর আগে যাদের প্রত্যেককে বড় ধরণের এক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়৷ এক মৃৎশিল্পীর কথায়, এলাকা এতটাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল যে, কোন প্রতিমা অর্ধেক, তো কোন প্রতিমা অর্ধেকেরও বেশি গলে গিয়েছে৷ কিছু কিছু প্রতিমা একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ স্থানীয় মৃৎশিল্পী কালাচাঁদ পাল বলেন, গতবছর বন্যা পরিস্থিতির জন্য কয়েক হাজার টাকা লোকসান হয়েছে৷ এবারও যদি একই পরিস্থিতি হয়, সেই ভয়ে গতবারের চেয়ে কম প্রতিমা গড়ছি৷ এখন চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। প্রতিমা কি করে শুকাবে সেই চিন্তায় আছি।
তবে বেশিরভাগ মৃৎশিল্পীরাই জানালেন, গত বছরের চেয়ে এবার তারা কয়েকটি হলেও সংখ্যায় কম প্রতিমা গড়ছেন৷ ওই এলাকার মৃৎশিল্পী তাপস পালের বলেন, তা না করে উপায়ি বা কী আছে৷ গতবার ক্ষতির মুখে পড়া অনেক শিল্পী এখনও ঋণ শোধ করতে পারেননি৷ নেতারা বারবার এসে প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষতিপূরণে ব্যবস্থা হয়নি৷ তাই আবার নতুন করে কে ঝুকি নেবে? প্রবীন মৃৎশিল্পী পরেশ পাল বলেন, “আসলে আমাদের শিল্পীদের কথা কোন সরকারি ভাবেনা৷ পুজোর সময় সবাই ক্লাবকে নিয়ে কিংবা ভাল পুজো করলে ক্লাবকে পুরস্কার দিতে ব্যাস্ত৷ আমরা শিল্পীরা কেউ ভাল প্রতিমা গড়লে, সেই পুরস্কারও ক্লাবই পায়৷ তাই আমরাই বঞ্চিত৷” পরেশ বাবু আবার ফালাকাটা ব্লকের মৃৎশিল্পীদের সংগঠনের সভাপতি৷ তিনি বলেন, “গতবার বন্যার পর প্রশাসনের কর্তা ও নেতারা এসেছিলেন। প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। ফালাকাটা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতর নব নির্বাচিত প্রধান বিকাশ কুন্ডু বলেন, মৃৎশিল্পীদের কথা রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেকছে। আশা করছি ফালাকাটার মৃৎশিল্পীদের জন্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহন করবে। আলিপুরদুয়ার জেলাপরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি মোহন শর্মা বলেন, গতবারের বন্যা পরিস্থিতিতে মৃৎশিল্পীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল৷ জেলা প্রশাসনের কর্তারাও বিষয়টি দেখছেন৷ ওই শিল্পীরা যাতে তার একটা ক্ষতিপূরণ পান সে ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে৷ আশাকরি কিছু একটা ফল বের হবে৷
ছবিঃ অরুনাংশু মৈত্র (টি.এন.আই)