আলু চাষে হতাশাগ্রস্ত ভাগচাষী এখনো দেখছেন আশার আলো

স্বপন রায় বীর

তিন বিঘা জমিতে কোন রকমে ফসল তোলার পর অর্ধেক মালিককে দেয়ার পর যতটুকু উদ্বৃত্ত থাকে তা দিয়ে কোন ভাবে ডাল – ভাত জোটে ভাগ চাষী মামার (মামু রায়)৷ বছরের তিন মরসুমে আমন ধান, আলু, পাট ইত্যাদি চাষ করেই চলে তার দিন। কোন ফসলের ক্ষতি হলে পড়তে হয় নিদারুণ কষ্টে। তখন দিনের ভাত যোগাতে হয়। অতি কষ্ট হাত পাততে হয় অন্য কা্রো কাছে৷ এমনি এক ভাগ চাষীর জীবন যাপন ঘিরে রবীন্দ্র ঠাকুরের “ওরা কাজ করে” কবিতার বাস্তব পেক্ষাপটে চিত্র দেখা গেল ভাগ চাষি মামার কাহিনি দেখে৷ উল্লেখ্য, যে কৃষিপ্রধান দেশে হাজারও কৃষকের সমস্যার মাঝে, এর চেয়েও আরও করুন এই চিত্র৷ উত্তরের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়ি এলাকার কৃষক সুজন রায় ও তার প্রতিবেশী ভাগ চাষী মামু রায়। মামু রায়ের ডাক নাম মামা৷ জানা যায় – কৃষক মামা একজন ভাগ চাষী, সামন্য তিন বিঘা জমি তার সম্বল, দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার৷ এবারের রবি ফসল আলু চাষ করে দেনা মেটাবেন মালিকের তাই রোদ – ঠান্ডা উপেক্ষা করে দিন ভর জমিতে কাজ করে চলেছেন৷ এবারে তিন বিঘা জমিতেই আলু চাষ করেছেন৷ ঋণ করে সাড় ও কীটনাশক নিয়েছেন, ফসল তোলার পর একদিকে যেমন মিটিয়ে দিতে হবে দেনা, সাথে জমির মালিককে চার ভাগের এক ভাগ৷ কয়েকদিন পরের ফসল তুলতে হবে৷ ফসলের দাম ঠিকঠাক থাকলে হয়ত এবার সমস্যায় ভুগতে হবে না৷ তবে ফসল মূল্য আর ফলন কম হলে এবারও কপালে  জুটতে পারে বিপত্তি৷ ভাগ চাষি মামা সারাদিন জমিতেই থাকেন। এই আলু চাষেই তাকে এবং পরিবারকে বেঁচে রাখবে৷ অন্যদিকে, মেখলিগঞ্জ কৃষি সমবায় থেকে জানা যায় – ভাগ চাষীদের কোন সরকারি সুবিধা দেয়া হয় না, সাড় থেকে শুরু করে ফসলের বিমাও মিলবে না ভাগ চাষীদের৷ তবে, সরকারি সুবিধা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কৃষক মামা জানান – এবারের ফসল চাষে সরকারি কোন সুবিধা তিনি পাননি, ঋণ করেই চাষ করছেন, ফসল দাম পেলেই বাঁচবেন, না পেলে না খেয়ে মরবেন৷ তবে তিনি আশা রেখে একটূ মৃদূ হেসে তাঁর ভাষায় বলেন “এবারে হত দাম পাইম, দাম পাইলে সব গিলা ঋণ শোধ করিম, কয়েক মন ধান কিনি রাখিম৷ বেটি বড় হছে কয়েক দিন পর বেছে খাবার লাগিবে ,আলুর দাম পাইলে সব গিলায় করিম”৷

Facebook Comments
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!