প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সুস্থতায় আর্থিক যোগানে এম.এ পাশ দিদি ফেরী করছেন শাড়ি
সুপ্রিয় বসাক (টী.এন.আই ধুপগুড়ি) । টি.এন.আই সম্পাদনা শিলিগুড়ি
বাংলাডেস্ক, টী.এন.আই ধুপগুড়ী ১৩ই জানুয়ারি ২০১৮: প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সুস্থতায় আর্থিক যোগানে এম.এ পাশ দিদি ফেরী করছেন শাড়ি। জীবন যুদ্ধে কঠিন লড়াই করে লক্ষ্য পুরন ভাইয়ের সুস্থতার জন্য ঘুরেছেন বিভিন্ন সরকারি দফতর এবং মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু তাতেও আর্থিক সমস্যা বড় বাধা হয়ে দড়ানোয় শেষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করার পর গ্রামে গ্রামে ফেরী করে চলেছেন শাড়ি। ধুপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের টুকলিমারী এলাকার সরকার পরিবারে চিত্র। প্রতিবন্ধী ভাইয়ের চিকিৎসা ও সংসার চালাতে গ্রাম ঘুরে শাড়ি ফেরী করছেন দিদি সুষমা সরকার। লক্ষ্য একটাই ভাইকে সুস্থ করে তোলা।বাবা মা এবং চার ভাইবোনের সংসার খুব ভালোভাবেই ছিল। বাড়িতে ঘর তৈরি করতে গিয়ে পেশায় কাঠ মিস্ত্রী সুষমার বাবার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে পরিবারে নেমে আসে অনিশ্চয়তা। বাধ্য হয়ে লেখা পড়ার আশা ত্যাগ করতে হয় সুষমাকে। কিন্তু ডাউকিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সুপ্রিয় গুহ সুষমাকে আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে পড়াশুনা ধরে রাখার ব্যবস্থা করেন।তবে সুষমার একভাই প্রতিবন্ধকতার জেরে মারাও যায়। সবচেয়ে ছোট ভাই পুর্ন সরকার সুস্থ ভাবে চলা ফেরা করতে পারলেও মাত্র ১৩ বছর বয়সে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অচল হয়ে যায় পুর্নর দুই পা সহ বাম হাত।গত ছয় বছর থেকে পুর্নর চিকিৎসা চলছে।মাঝে সুষমার এক বোনের বিয়েও দিয়েছেন সুষমা। ভাইকে সুস্থ করে তুলতে সুষমা অবসর সময়ে সেলাই মেশিন চালানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করছেন।তবে বিপুল চিকিৎসা খরচের সামনে এই আয় যে তুচ্ছ।তাই সরকারী সাহায্যের আর্জি নিয়ে জনে জনে ঘুরে মিলেছে মা সরস্বতী সরকারে নামে মাত্র ৭৫০ টাকা প্রতিমাস বিধবা ভাতা।
চিকিৎসকদের তরফে প্রথমেই জানানো হয়েছিল, পুর্ন স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মাঝে পুর্নর পড়াশুনাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দিদি ফের তাকে স্কুলে ভর্তি করলে বর্তমানে সে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পড়শুনার পাশাপাশি হাটা চলা এবং আর পাঁচজনের মতো জীবন কাটানোর ইচ্ছা পুর্ন সরকার।ভাইয়ের এই ইচ্ছা পুরনে সুষমা নিজের সমস্ত ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজ কঠিন লড়াইয়ে।ভাইকে প্রতিনিয়ত স্কুলে দিয়ে আসতে এবং স্কুল থেকে আনতে ভরসা দিদির সাইকেল বা ভ্যান রিক্সা।উন্নততর চিকিৎসার আশায় যেই চিকিৎসকের কাছেই গিয়েছেন সকলের বক্তব্য ব্যয়বহুল এই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে পুর্নর। তাই তো সুষমা ভাইকে সুস্থ করে তুলতে ধুপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ধুপগুড়ি বিধায়কের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। সুষমার কথায়, ভাইকে সুস্থ করতে যা করতে হয় তাই করার চেষ্টা করে চলেছি। কিন্তু আর্থিক অভাব বড় বাধা। ডাউকিমারী স্কুলের একজন শিক্ষক সুপ্রিয় গুহ বেশিরভাগ সময় ভাইয়ের ঔষধ কিনতে আর্থিক সাহায্য করে থাকেন।এছাড়া কোনো সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য আমরা পাইনি। সুষমার মা সরস্বতী সরকারের কথায় পুর্ন বড় হয়েছে,তার বিভিন্ন কাজ কর্ম সহ বিছানা থেকে ওঠা নামা করাতে গিয়ে আমি নিজেই অসুস্থ। আরসুষমা যথেষ্ট চেষ্টা করে চলেছে। এদিন সাংবাদিকদের মুখে সুষমার বিষয়টি জানতে পেরে সুষমার বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন ধুপগুড়ির বিধায়ক মিতালী রায়। তিনি সুষমা এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার খরচ ও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে সাহায্যের আশ্বাস দেন।
ছবিঃ সুপ্রিয় বসাক (টী.এন.আই)