শিলিগুড়ি করিডরের সুরক্ষা চিন্তা বাড়িয়ে সীমান্ত ঘেঁষে বুলেট ট্রেন চালু করল চীন
বাংলাডেস্ক, টি.এন.আই, নতুন দিল্লী, ২৮শে জুন, ২০২১: গত শুক্রবার চীন হিমালয় অঞ্চলে তার প্রথম বুলেট ট্রেন পরিষেবা চালু করল। এই বুলেট ট্রেন পরিষেবা মুলত তিব্বত অঞ্চলে এই প্রথম। এই সম্পূর্ণ ৪৩৫.৫ কিমি দূরত্বের বৈদ্যুতিক রেল পরিষেবা তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে অরুনাচল সীমান্ত ঘেঁষা নিংচি শহর অবধি চলবে। পাশাপাশি, এই নিংচি শহর অরুনাচল প্রদেশের কাছে ঘেঁষা হওয়ার দরুন ভারত-চীন সিমান্তে ভারত যে অনেকটা রণকৌশলগত ভাবে পিছিয়ে গেল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অরুনাচল প্রদেশের থেকে নিংচির দূরত্ব মাত্র ৫০ কিমি। এই ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন সময়ে চীনা সৈন্য বাহিনী খুব সহজেই অরুনাচল প্রদেশের ভারত – চীন সীমান্তে পৌঁছে যাবে এই বুলেট ট্রেন মারফৎ তা অনুমান করতে হয়ত কোন প্রতিরক্ষা বিশারদ হতে হবে না। তবে শুধু যে এই বুলেট ট্রেনের মারফৎ অরুনাচল প্রদেশে ভারত – চীন সীমান্তে চীন তার সৈনাপত্যপূর্ণ নীতিতে সৌকর্য পাচ্ছে বা পাবে তা নয়। চীনের সামনে, রয়েছে শিলিগুড়ি করিডর অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের এক বিশাল অঞ্চলের ওপর আধিপত্য কায়েম করার ইচ্ছা। এর কারন, লাসা থেকে সিকিমের দূরত্ব মাত্র ৩৫০ কিমি, যা চীনা বায়ুসেনার পক্ষে এই অঞ্চলে মারণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অতিক্রম করা অতি সহজ কাজ। এই বিষয়ে চীনের সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের, ন্যাশানাল স্ট্রাটেজি ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর কিয়াং ফেং চীনা সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস কে জানিয়েছে এবং স্বীকারও করেছে যে এই বুলেট ট্রেন পরিষেবা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৈন্য, যুদ্ধ সরঞ্জাম, স্থলাস্ত্র ইত্যাদি নিয়ে অতি কম সময়ে অরুনাচল প্রদেশ বা সিকিমের সীমান্তে পৌঁছে যাবে চীনা সৈন্য। চীনা সরকার যে কতখানি মরিয়া এই বুলেট ট্রেন পরিষেবা চালু করতে, তা বোঝা গেল তখনই যখন তারা এই পরিষেবার উদ্বোধনের দিনটি এগিয়ে নিয়ে আসে ২৫শে জুন তারিখে। এর আগে শোনা গিয়েছিল যে এই ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধন হবে ১লা জুলাই ২০২১, যে দিন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অফ চাইনার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষার চিন্তার ভাঁজ এখানেই শেষ নয়। এই রেলওয়ে রুট পৌঁছুচ্ছে সিঞ্চুয়ান প্রদেশের চেংদু শহর অবধি। অর্থাৎ, বলা যেতে পারে মেইনল্যান্ড চীন থেকে অতি তাড়াতাড়ি সৈন্য বাহিনী লাসা কিংবা নিংচি পৌঁছে যাবে। লাসার সঙ্গে বেইজিং এর সরাসরি রেল পরিষেবাও রয়েছে যা কিনা পরিচিত কিংঘাই – তিব্বত রেলওয়ে হিসেবে। যদিও এই রুটে বুলেট ট্রেন পরিষেবা নেই, তবে এই রুটে চলেছে হাই স্পিড ট্রেন। এমনিতেই ডোকলাম নিয়ে চীন – ভারত সীমান্ত মতপার্থক্য রয়েছে ২০১৭ থেকেই। সেই ক্ষেত্রে ডোকলাম সীমান্তকে যে পাখির চোখ করে রেখেছে চীনা সেনা, তা বলাই বাহুল্য। লাসা পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চালু হওয়াতে এই সীমান্তে সৈন্য বা গোয়েন্দা বাহিনী পাঠানো অনেক অংশে সহজ হয়ে যাবে চীনের পক্রা্ যা মোটেই দিল্লী সাউত ব্লক পক্ষে এবং শিলিগুড়ি করিডরের সুরক্ষার পক্ষে ভাল খবর নয়
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন বুলেট ট্রেনটির হল ফুক্সিন বুলেট ট্রেন যা তিব্বত কে মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে। এই ট্রেন ইলেক্ট্রিক এবং অভ্যন্তরীণ জ্বলনে মাধ্যমেও চলবে। অর্থাৎ, যদি যুদ্ধের সময় ইলেট্রিক বন্ধ হয়ে যায়, তখনো এই ট্রেন পরিষেবা চলতে থাকবে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই ট্রেন বিশেষত যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে এই পরিষেবা চালু হওয়াতে সিকিম, উত্তরবঙ্গ এবং অরুনাচল প্রদেশে সীমান্ত পাহারা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি করিডর অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে প্রতিরক্ষা নজরদারি ভারত আর বাড়াবে আশা করা যায়।
ছবি: সংবাদচিত্র