দেওগাঁও এর দুঃস্থ মেধাবি ছাত্রী ফারজিনার পরবর্তী পড়াশোনা নিয়ে পরিবারের আশঙ্কা
অরুনাংশু মৈত্র (টী.এন.আই ফালাকাটা) । টি.এন.আই সম্পাদনা শিলিগুড়ি
বাংলাডেস্ক, টী.এন.আই, ফালাকাটা, ১৬ই জুন, ২০১৮: নূন আনতে পান্তা পুরোয়, এই অবস্থা পরিবারের। বাবা ফটিয়ার রহমান মানসিক ভারসাম্যহীন, সারাদিন বাড়ির বাইরে ভবঘুরে মতো ঘুরে বেড়ায়, মা নূরিফা খাতুন মানুষের বাড়িতে সারাদিন কাজ করে সংসার চালান। এই পরিবারের মেয়ে ফারজিনা পারভীন মাত্র এক নম্বরের জন্য ফালাকাটা ব্লকে তৃতীয় স্থান অধিকারের থেকে পিছিয়ে পড়ল। আর এই এক নম্বর কম পেয়েছে ভূগোল প্রাকটিক্যালে কেঁদে বলল দেওগাঁওএর হীরের টুকরো মেয়েটি। অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থির থাকলে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে ভালো ফল করা যায় তার জলন্ত উদাহরন ফালাকাটার দেওগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারজিনা পারভীন। ফালাকাটার দেওগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েত অন্তর্গত পশ্চিম দেওগাঁও – এ এই হীরের টুকরো মেয়েটি থাকে। সে এবারে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৭ পেয়ে দেওগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বাবা ফটিয়ার রহমান মানসিক ভারসাম্যহীন, সারাদিন বাড়ির বাইরে ঘুরে বেড়ায়। সংসার কিভাবে চলে সে বিষয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। দুই ছেলে, এক মেয়ে সহ মোট চারটি প্রানীর খাদ্যের জোগান দেয় নূরিফা খাতুন তথা ফারজিনার মা। কি ভাবে সংসার চালান সে কথা বলতে বলতে চোখ ছলছল করছে জলে। মানুষের বাড়িতে সারাদিন কাজ করে এতগুলো মানুষের পেঠ চালান একা হাথে। বড় ছেলে নূর ইসলাম সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে কলেজে পড়ছে, ছোট ছেলে নূর আলম বিগত উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৫৫ পেয়ে পাস করে এখন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এবারে দাদাকে ১২ রানে হারিয়ে বোন সেরার সেরা হয়ে শেষ হাসি হাসছে। কিন্তু ছেলে মেয়েদের ভালো ফলে বাবা মা এর হাসি য়ে উধাও। মেয়ে ভালো ফল করার পরও চোখের জল আটকাতে পারছেনা ফারজিনার মা নূরিফা বিবি। মেয়ের ইচ্ছা কিভাবে পূরন করবে সেটা ভেবেই চোখে জল চলে আসছে নূরিফা দেবীর। টাকার অভাবে ওর পড়াশুনা কি বন্ধ হয়ে যাবে এটা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠছে তার। এমনিই তো সংসার চলে না তার উপর ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা, কী করবে ভেবে কূলকিনারা কিছুই পাচ্ছে না তিনি। ফারজিনার বক্তব্য এত দিন ধরে য়ে ভাবে এলাকার মানুষ ও বিদ্যালয়,গৃহ শিক্ষকদের সহযোগিতায় এতদূর এসেছি, তাঁদের সহযোগিতায় বাকি পথ য়েতে পারব। দেওগাঁও নাগরিক মঞ্চের পক্ষ থেকে সদস্য আবিদ হোসেন জানিয়েছেন তার শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্ত রকম খরচ মঞ্চ বহন করবে। ফারজিনার এই ফলাফলে যারপর নাই খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক বর্মন মহাশয় বলেন “এবারের বিদ্যালয়ের সামগ্রিক ফল খুব ভালো, তবে ফারজিনা অসাধারন রেজাল্ট করে আমাদের গর্বিত করেছে। অভিযোগ ভূগোল প্রাকটিক্যালে ১ নম্বর কম না দিলে ফালাকাটা ব্লকে তৃতীয় স্থান অধিকার করতো তাতে দেওগাঁও এর নাম আর উজ্জল হতো”।
ছবি: অরুনাংশু মৈত্র (টি.এন.আই)