আবার শিলিগুড়ির টেবিল টেনিসে গর্ব ফেরানোর লড়াইয়ে শিলিগুড়ির পুণীত বিশ্বাস
বাংলাডেস্ক, টি.এন.আই, শিলিগুড়ি, ০৮ই জুলাই, ২০২৫: সাম্প্রতিক এশিয়ান ইয়ুথ টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ উজবেকিস্তানের তাসখন্দে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্যাডেট বয়েজ দল অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছে। অনকুর ভট্টাচার্য, অভিনন্দ প্রধীবধি, প্রিয়নুজ ভট্টাচার্য এবং শিলিগুড়ির পুণীত বিশ্বাসের দল দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৩-২ ব্যবধানে সেমিফাইনালে হেরে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। টুর্নামেন্টটি হয়েছিল ২৬শে জুন ২০২৫ থেকে ২রা জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত।
সরাসরি কথোপকথন পুণীত বিশ্বাসের সাথে
শিলিগুড়ির বাসিন্দা এবং শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র পুণীত বিশ্বাস বর্তমানে বিশ্ব টেবিল টেনিস র্যাঙ্কিংয়ে ৮২৩ নম্বরে রয়েছেন। তাঁর টেবিল টেনিস যাত্রা শুরু হয়েছিল শিলিগুড়ির ভারত নগর এলাকায় তুফানী সংঘের অধীনে রেইনবো টিটি কোচিং সেন্টার থেকে। তিনি জানান, “আমার প্রথম কোচ ছিলেন বিরুপাক্ষ সাহা (বিরু স্যার)। ছোট্ট ক্লাব থেকে শুরু হলেও এখন এই কোচিং সেন্টারটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ বড় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিরু স্যারের অবদান আমার ক্যারিয়ারে অপরিসীম। আমাদের পুরনো কোচ রাজদীপ স্যারও দারুণ কোচ ছিলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।”তাসখন্দের সাম্প্রতিক টুর্নামেন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, “খুবই ভাল লেগেছে। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল এই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলার। এবার ব্রোঞ্জ পেয়েছি, তবে আমাদের আসল লক্ষ্য ছিল ফাইনাল। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে সেমিফাইনালে হেরে গেছি। সামনে আরও ভালো খেলার চেষ্টা করব, লক্ষ্য সোনা জেতা।”এর আগেও তিনি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছেন। তিনি বলেন, “এই টুর্নামেন্ট আমার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা। এর আগে দোহায় গিয়ে পদক জিতেছি। এখন কলকাতায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছি আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য।”টিমের সমন্বয় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দলের মধ্যে সমন্বয় খুবই ভালো ছিল। সকলেই একে অপরের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। কোচ ও আধিকারিকরাও আমাদের মানসিকভাবে উৎসাহিত করেছিলেন।”
শিলিগুড়ির টিটি কোচিং সেন্টারগুলির অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে কোনও কোচিং সেন্টারের জন্য দরকার খেলোয়াড়দের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও স্থায়িত্ব। অনেক সময় খেলোয়াড়েরা বারবার কোচিং সেন্টার বদলায়, এতে প্রশিক্ষণে ব্যাঘাত ঘটে। তাই কোচ ও খেলোয়াড়ের পারস্পরিক বিশ্বাস খুবই জরুরি।”ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে পুণীত বলেন, “আমার স্বপ্ন অলিম্পিকে খেলে দেশের জন্য সোনা জেতা।”প্রিয় ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন শিলিগুড়িরই শুভজিত সাহা, যিনি এই শহর শিলিগুড়ির দ্বিতীয় অর্জুন পুরস্কার প্রাপক এবং দুইবারের কমনওয়েলথ সোনা জয়ী। বর্তমানে তিনি জাতীয় দলের কোচ। প্রিয় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে পুণীত বলেন, “আমার প্রিয় ফ্যান ঝেনডং (Fan Zhendong) যিনি চীনের খ্যাতনামা খেলোয়াড়। যদিও এখন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সরে এসেছেন, তবে ক্লাব পর্যায়ে খেলছেন।”শিলিগুড়ির টিটি গৌরব হারানোর বিষয়ে তিনি স্পষ্ট বলেন, “গৌরব ফেরাতে খেলোয়াড়দের জয়ী হওয়ার ইচ্ছা, কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও পরিকাঠামো উন্নয়ন দরকার। বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জিততে পারলেই আবার শিলিগুড়ি টেবিল টেনিসের রাজধানী হয়ে উঠবে।”পারিবারিক অবদান সম্পর্কে তাঁর আবেগঘন বক্তব্য, “আমার পরিবারের অবদান অপরিসীম। যদিও আমাদের পরিবারে কেউ টেবিল টেনিসের সঙ্গে যুক্ত নন, তবুও আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমার জন্য সব কিছু করেছেন। আমার ঠাকুমা (আম্মা) আমাকে প্রতিদিন কোচিং সেন্টারে নিয়ে যেতেন, আমার বড় হওয়া দেখেছেন। আমি আমার পরিবারকে খুব ভালোবাসি।”
শেষ কথা:
পুণীতের মতন খেলোয়াড়রা ফের শিলিগুড়ির টেবিল টেনিসকে জাগিয়ে তুলছে। তার স্বপ্ন, মেধা, কঠোর পরিশ্রম এবং পারিবারিক উৎসাহ এই শহরকে আবার ‘পূর্ব ভারতের টিটি রাজধানী’হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। প্রয়োজন শুধু সমন্বিত প্রচেষ্টা, সঠিক দিশা ও পরিকাঠামোর উন্নতি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সুব্রত রায়, timesofnorth.IN
ছবি: pingsunday.com
