ইসলামপুরে মেয়ের জন্মদিনে রক্তদান শিবির আয়োজন করলেন শিক্ষক দম্পতি
সুশান্ত নন্দী (টি.এন.আই সংস্কৃতি) । টি.এন.আই সম্পাদনা বালুরঘাট
বাংলাডেস্ক, টি.এন.আই, ধুপগুড়ি, ৪ঠা মার্চ, ২০১৯: মেয়ের সপ্তম জন্মদিনে আদিবাসী মহল্লায় রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে সমাজের এক নতুন দিককে তুলে ধরলেন এক শিক্ষক দম্পতি। এভাবেই যদি প্রতিটি শিশুর জন্মদিনে বা কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয় তবে এলাকায় কখনোই রক্ত সংকট থাকবে না। শুধু তাই নয়, জন্মদিনকে সামনে রেখে রবিবার ইসলামপুর মিলন পল্লী আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে ছিল চক্ষু পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুগার নির্ণয় কর্মসূচি সহ বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ। প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসীরা সবসময় চিকিৎসা সুযোগ পান না। তাই তাদের পৌঁছে দেওয়া হলো এই নিঃশুল্ক চিকিৎসা। রবিবার ইসলামপুর আশ্রম পাড়ার শিক্ষক দম্পতি সুশান্ত নন্দী ও সুরমা রানীর আয়োজনে তাদের একমাত্র মেয়ে রূপকথার জন্মদিনে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোলাম রব্বানী বলেন, সুশান্ত নন্দীর এই উদ্যোগে আমি রীতিমতন অভিভূত। বিগত বছর তার বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং এই বার্তা আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও পৌঁছে দিয়েছি যে এভাবেও জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে রক্ত সংকট দূর করা যায়। এদিনের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। অন্যদিকে এভাবেই যদি প্রতিটি বাড়িতে তাদের আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় তবে রক্তের অভাবে মুমূর্ষ রোগীরা প্রাণ ফিরে পাবেন বলে জানান উত্তর দিনাজপুরের জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি ফারহাদ বানুর প্রতিনিধি জাভেদ আখতার। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুজন মল্লিক। এদিন ছিল এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের দ্বারা পরিবেশীত সমবেত নৃত্য অনুষ্ঠান। একক নৃত্য পরিবেশন করে এর মাধ্যমেই জন্মদিনের পাল্টা উপহার তুলে দেয় সবাইকে রূপকথা নন্দী। ছোট্ট রূপকথার জন্মদিনে মন্ত্রীর পাশাপাশি কবি, লেখক, সমাজকর্মী, ও শিল্পীদের নিয়ে যেন এমনই চাঁদের হাট বসেছিল এদিন। রূপকথার বাবা সুশান্ত নন্দী জানান,প্রতি বছর একটু অন্য ধারার বার্তা নিয়ে শুরু হয় তার মেয়ের জন্মদিন। প্রথম বছর বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে ছিল অনুষ্ঠান। পরের বছর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুঃস্থ শিশুদের নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা শিবির ও চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়। এর পরের বছর ছিল বাড়িতেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন। কখনো রক্তদাতা আবার কখনো বা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের মত অনেকেই হয়ে ওঠে ওই জন্মদিনের আমন্ত্রিত অতিথি। আর এবারও রক্তদাতারাই ছিল অতিথি।তাঁদের পেট পুরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকুক সেই খরচ তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য বহন করেন। পাশাপাশি তাদের একজন গর্বিত রক্তদাতা হিসেবে স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এদিন অন্যান্য বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি নিশিকান্ত সিনহা, ইসলামপুর পথিপার্শস্থ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুভাষ চক্রবর্তী, ইসলামপুর মহকুমা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক কাজল মন্ডল, উত্তর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি মেহেদী হেদায়েতুল্লা,সম্পাদক কাজল মন্ডল, নাট্যকার উত্তম সরকার, গৌতমী সাহু, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অর্পিতা দত্ত, লেখক ভবেশ দাস, মৌসুমী নন্দী, সমাজকর্মী, সুশান্ত মন্ডল, সুদীপ্ত ভৌমিক, রাজু দাস, বিক্রম দাস,অন্য ভুবন সমাজ কল্যাণ মূলক সংস্থার সম্পাদক সম্পা শেঠ, ইসলামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল সরকার,গুঞ্জরিয়া এক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অরবিন্দ মন্ডল, লালন ফকির ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক স্বরূপনান্দ বৈদ্য, মাড়োয়ারি যুব মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মোহিত আগারওয়াল, ইসলামপুর মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এর সম্পাদক সুদেব নন্দী, ক্রীড়াবিদ দেবাশীষ চক্রবর্তী, রাম ঘোষ প্রমূখ। স্বাস্থ্য শিবিরে অংশ নেন প্রগ্রেসিভ ডক্টরস এসোসিয়েশন এর সম্পাদক ডাঃ সমরেশ শীল, বিশিষ্ট সমাজকর্মী শুভেন্দু মজুমদার, বিধান সাহা, রিঙ্কু বৈদ্য এবং সমাজকর্মী রঞ্জন সাহার সৌজন্যে হিমালয়ান আই সেন্টারের পক্ষ থেকে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা। এদিন কুড়ি ইউনিট রক্ত রূপকথাকে উৎসর্গ করে উপহার তুলে দেন রক্তদাতারা। ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে জমা করা হয়বই রক্ত। পাশাপাশি এদিন স্বাস্থ্য শিবিরে প্রায় দেড়শ জন আদিবাসীদের চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয় বলে আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে।
ছবি: সুশান্ত নন্দী (টি.এন.আই)